ছেলেবেলা থেকেই হুমায়ুন কবির চৌধুরী ছিলেন একটু আলাদা। গ্রামের মেঠোপথে হেঁটে যেতে যেতে তিনি দেখতেন, কোথাও কৃষকের মুখে হতাশা, কোথাও শিশুদের স্কুল না থাকার কষ্ট, কোথাও আবার নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর কান্না। এই দৃশ্যগুলো তার কোমল মনে দাগ কাটত গভীরভাবে।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সে এক বিশেষ অভ্যাস গড়ে তোলে — প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খাতায় লিখে রাখত। প্রথমে ছিল সাধারণ বর্ণনা, পরে ধীরে ধীরে সেই লেখায় যুক্ত হতে লাগল প্রশ্ন — “কেন এমন হলো?”, “কীভাবে এটা বদলানো সম্ভব?”। শিক্ষকরা তার লেখার ভঙ্গিতে মুগ্ধ হতেন। একদিন বাংলার শিক্ষক বলেছিলেন,
“হুমায়ুন, তুমি শুধু গল্প লেখো না, সমাজের কথা বলো। তুমি বড় সাংবাদিক হতে পারবে।”
কথাটি হুমায়ুনের মনে গেঁথে গেল। কিন্তু সাংবাদিক হওয়া সহজ ছিল না। পরিবার চাইত, সে ভালো কোনো চাকরি করুক — যেন সংসারের হাল ধরে। তবু হুমায়ুন হার মানেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ পড়তে শুরু করল। ক্লাসের বাইরে সে কাজ করত ছোট ছোট পত্রিকায়, সামান্য সম্মানীতে রিপোর্ট লিখত — কখনও মিছিলের খবর, কখনও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের গল্প।
প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ আসে যখন একটি দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে হয়। অনেক ভয় ছিল — যদি কেউ রাগ করে ক্ষতি করে! কিন্তু তখন মনে পড়েছিল ছেলেবেলার সেই দৃশ্যগুলোর কথা — যারা চুপচাপ অন্যায়ের শিকার হচ্ছিল। হুমায়ুন নিজের ভেতরের সাহসকে জাগিয়ে তুলে রিপোর্ট করেছিল। আর সেই রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর প্রথমবার সে টের পেল — একটা সত্য কথা লিখে মানুষকে বদলাতে সাহায্য করা যায়।
এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রিপোর্ট থেকে কলাম, কলাম থেকে বিশেষ প্রতিবেদন — একের পর এক সাফল্যের গল্প গড়তে থাকলেন হুমায়ুন কবির চৌধুরী। তবুও তিনি মনে রাখেন,
“সাংবাদিকতা শুধু খবর পৌঁছে দেওয়া নয়, এটা মানুষের স্বপ্ন, ব্যথা আর সংগ্রামের কণ্ঠস্বর।”
আজ তিনি যখন মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়ান, বা কলম চালান — তখনো তার ভেতরে সেই ছেলেটি বেঁচে আছে, যে চেয়েছিল সমাজের প্রতিচ্ছবি বদলাতে, সত্যের আলো ছড়িয়ে দিতে।