শিরোনাম:
বরুড়ায় ওরাই আপনজন সামাজিক সংগঠনের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত বরুড়ায় ওরাই আপনজন সামাজিক সংগঠনের ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির ফুটবল ফেস্ট উদ্বোধন বরুড়া উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম এর অগ্রগতি বরুড়ায় শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃংখলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা-২০২৫ অনুষ্ঠিত বরুড়ায় প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক মেধাবী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত বরুড়ায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামে অত্যাধুনিক উৎপাদন কারখানা নিয়ে গ্রাসহপার বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস সম্প্রসারিত হলো কুমিল্লায় ধ্রুবতারার রজতজয়ন্তী উদযাপন 

কুরআন সুন্নাহের আলোকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য

Barura Kantha / ৩৯ Time View
Update : সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কুরআন সুন্নাহের আলোকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য

———–মাওলানা মুফতি জামাল হোসেন শাহজী।

ঈদ শব্দের অর্থ খুশি বা উৎসব। আর মিলাদ শব্দের অর্থ জন্ম সময়। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) এর অর্থ হচ্ছে নবীজির শুভাগমনে আনন্দ উৎসব। পারিভাষিক অর্থে মিলাদ বলতে জন্ম সময়, জন্ম বৃত্তান্ত তথা কারো জন্ম তারিখে তার জীবন চরিত আলোচনা ও তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের অঙ্গীকার করা বুঝায়। মিলাদ শব্দটি যদিও আরবি, কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রচলন ফারসি ভাষা থেকে হয়েছে। অনেকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট না জেনে এ শব্দটি আরবি ভাষার আঙ্গিকে তুলে ধরে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করেন। ফারসিতে মিলাদ অর্থ জন্ম সময়। আরবী মাওলুদুন শব্দ থেকে মিলাদ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বিশ্বের ঈমানি প্রেরণার জয় ধ্বনি নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রবিউল আউয়াল মাসে। পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম উৎসব। কোন নেয়ামত ও রহমত লাভ করলেই আনন্দোৎসব করা যেরূপ মানুষের স্বভাবজাত কাজ, তদ্রূপ আল্লাহ তাআলার নির্দেশও তাই। যেমন কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে : ‘(হে রাসূল!) বলুন: আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর রহমত পেয়ে যেন তোমরা আনন্দিত হও।’ (সূরা ইউনুছ : ৫৮)
এ আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর রহমত বলতে কী বুঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে ইবনে জারির তাবারী (রহ.) তাঁর তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন : অনুগ্রহ বলতে ইসলাম আর রহমত দ্বারা আল-কুরআনে বুঝানো হয়েছে। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ.) আদ্দুররুল মানসুর তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন : ‘এখানে ‘আল্লাহর অনুগ্রহ’ বলতে ইলম তথা কুরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে। আর ‘রহমত’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে হযরত মুহাম্মাদ (দ) কে। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘আমিতো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)
অর্থাৎ তোমরা মহামূল্যবান সম্পদ আল-কুরআন ও ইসলাম বা রাসূলে খোদা (দ)-কে পেয়েছো, এর জন্য আনন্দ করা তোমাদের অন্যতম কাজ। যদি কুরআন মাজীদ ও দীন ইসলাম পাওয়ার কারণে আনন্দ করতে হয় তাহলে যার মাধ্যমে কুরআন ও দীন পেয়েছি, যিনি ছিলেন সমগ্র জগতের রহমত, তাঁর আগমন যে কত বড় নেয়ামত ও রহমত তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) তাইতো তাঁর রচিত ‘মা সাবাতা মিনাসসুন্নাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন : ‘হাজার মাসের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কদর, ফজিলতের রাত্রি শবে বরাত, শবে মেরাজ, দুই ঈদের রাত এ সবই রাহমাতুল্লিল আলামীনকে দান করা হয়েছে। যাঁকে দান করা রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, স্বয়ং তাঁর আগমন দিবস যে কত লক্ষ-কোটি দিবস-রজনীর চেয়ে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সামান্য জাগতিক নেয়ামত লাভ করলেও তার জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা আল-কুরআনে দেখতে পাই। যেমন আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ কামনা করে হযরত ঈসা (আ.) যে, দোয়া করেছিলেন তা প্রণিধানযোগ্য। যেমন এরশাদ হয়েছে :হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম বলল : হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য ঊর্ধজগৎ হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন। এ হবে আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য ঈদস্বরূপ, আর আপনার অন্যতম নিদর্শন।’ (সূরা মায়িদা : ১১৪)
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাঞ্চা ভরা খাওয়া পেলে তা যদি হযরত ঈসা (আ.)-এর ভাষায় সৃষ্টির আদি হতে অন্ত পর্যন্ত আনন্দোৎসবের কারণ ও আল্লাহ তাআলার নিদর্শন হয় তাহলে সৃষ্টির সেরা মানব, রহমতের ভা-ার রাসূলে পাক (দ.)-এর মতো এ মহান নেয়ামতের আগমন দিবস কতই না মর্যাদাবান, গুরুত্ববহ, কতই না আনন্দের তা সহজেই অনুমেয়।
হযরত ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেন : ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার বংশের একজন স্বপ্নে তাকে খুবই খারাপ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, আপনার অবস্থা কি? সে জবাবে বলল, তোমাদেরকে ছেড়ে আসার পর আমার কল্যাণজনক কিছুই হয়নি, হ্যাঁ, এই আঙ্গুল (শাহাদাত অঙ্গুলি) দ্বারা পানি পাই। কারণ, এ আঙ্গুলের ইশারায় আমি দাসী সুয়াইবাকে মুক্তি দিয়েছিলাম।’
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ফাতহুল বারী এবং আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রহ.) তাঁর রচিত ‘আইনী’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন : ইমাম সুহাইলী (রহ.) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, অত্যন্ত দুরবস্থার মাঝে পতিত রয়েছে। সে বলল, ‘তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি শান্তির মুখ দেখিনি। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব লাঘব করা হয়।’ হযরত আব্বাস (রা.) বলেন : ‘তার এ আযাব লাঘবের কারণ হলো রাসূলে পাক (দ) এর জন্মদিন ছিল সোমবার। তাঁর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে আসায় দাসী সুয়াইবাকে সে খুশিতে মুক্তি দেয়। (ফাতহুল বারী, ৯ম খ-, পৃ. ১১৮; আইনী, ২০/৯৫)
যে কাফের সম্পর্কে কুরআন মজীদে সরাসরি নাযিল হয়েছে : ‘ধ্বংস হয়েছে আবু লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও।’ সে যদি একজন কাফের হওয়া সত্ত্বেও ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) এর খুশির কারণে তার প্রতি সোমবার আযাব লাঘব হয়, শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে পানি বের হয়, যা খেয়ে সে তৃপ্ত হয়, একজন মুসলমান ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) উদযাপন ও আনন্দানুষ্ঠান করলে তাতে রহমত, বরকত লাভ এবং আযাব থেকে মুক্তিলাভের এক বিরাট সুযোগ, তা যে কোন বিবেকবান ব্যক্তি সহজেই অনুধাবন করতে পারে। কবি শেখ সাদী (রহ.)-এর ভাষায় :
বন্ধুদের বঞ্চিত করার প্রশ্নই আসে না, তুমি তো এমন সত্তা যে, দুশমনের দিকেও লক্ষ্য রাখ।’ মিলাদুন্নবী (দ) উদযাপন দিবসকে কেন্দ্র করে রাসূলের পুরো জীবনকে আয়নার মতো নিজের জীবনের সামনে তুলে ধরা এবং সে অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ জীবন গড়ে তোলার সংকল্প গ্রহণের মতো উত্তম ও বরকতময় কাজ আর কী হতে পারে? রাসূলের মর্যাদা বর্ণনা করার সাথে সাথে তাঁর দাওয়াত ও হেদায়াত গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। অতীতে মনীষিগণ রাসূলের প্রশংসা বর্ণনার সাথে সাথে রাসূলের সুন্নাতকে তাঁদের জীবনে বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। হযরত আলী (রা.) যেমন ছিলেন রাসূলের সুন্নাতের ধারক, তদ্রূপ প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। তিনি বলেন : নবুওয়াত বৃক্ষের মাঝে তিনি বাছাইকৃত আলোকের আধার, সম্মানের সর্বোচ্চ চূড়ায় অধিষ্ঠিত, বাক্কা তথা মক্কা মুয়াজ্জমার মূলকেন্দ্র, অন্ধকারের বাতি, হেকমত ও প্রজ্ঞার উৎস। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) বিশ্বের অনেক দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উদযাপিত হয়। এ দিবসে রাষ্ট্রীয় ছুটির ব্যবস্থা সহ তা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। সে জন্য মুসলিম বিশ্বের জন্য এ দিবসটি স্মরনীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে নবীজি (দ) এর প্রেমে বিভোর হয়ে সামাজিক ও পারিবারিক জীবন সাজানোর মত তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন। বিহুরমাতি সাইয়্যেদুল মুরসালিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর