হুমায়ুন কবির চৌধুরীঃ নওয়াব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়িটি (Foyjunnesa Zamindar Bari) কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে অবস্থিত। তৎকালীন ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব ‘ফয়জুন্নেসা চৌধুরানি’ ১৮৭১ সালে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ছোটখাটো কিন্তু বেশ চমৎকার সুন্দর বাড়িটি যার মূল বাড়িটি দক্ষিণমুখী। তার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে বৈঠকখানা। বাড়ির পশ্চিমপাশে রয়েছে মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ। অনেকটা সময় সবুজের সান্নিধ্যে কাটানোর জন্য অনেক ভালো একটা জায়গা। দশ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি ১৯০৩ সালে স্থাপিত, যেটা আসলেই চক্ষু শীতল করার মত।
ফয়জুন্নেসা চৌধুরানি ছিলেন সভ্রান্ত এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ে করেন আরেক জমিদার গাজী চৌধুরীকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আর ঐ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় পাওয়া দেনমোহরের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে তিনি নিজে একটি বাড়ি তৈরি করেন। ঐসময় জমিদারীর প্রশিক্ষণ নেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার জমিদারীর আওতায় প্রায় হোমনাবাদ পরগণার বর্তমান সময়ের কুমিল্লা জেলার মোট ১৪টি মৌজা ছিল। ১৪টি মৌজাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৪টি কাছারিঘর ছিল। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী জমিদার। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে। তার জমিদারীর অধিকাংশ আয় এই নারী শিক্ষার পিছনে ব্যয় করতেন। তার এই সাহসী উদ্যোগ ও সাফল্যের কারণে তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়া তাকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “নওয়াব” উপাধিতে ভূষিত করেন। যা পুরো ভারত উপমহাদেশে একমাত্র মহিলা হিসেবে তিনি এই উপাধি পান। তিনি ছিলেন একাধারে জমিদার, সমাজকর্মী, লেখিকা।
ঢাকা থেকে এশিয়া এক্সক্লোসিভ, আল বারাকা, মুন লাইন বাস সরাসরি লাকসাম যায়। নন-এসি বাস, ভাড়া ৩৫০ টাকা। এছাড়া মুন লাইন পরিবহনের এসি বাস রয়েছে, ভাড়া ৪০০ টাকা।
ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে রাত ১১ঃ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ৭৪২ তুর্ণা এক্সপ্রেস লাকসাম পৌছায় সকাল ৪ঃ৩০ টার দিকে। এছাড়া ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী ট্রেন ৭১২ উপকূল এক্সপ্রেস ছাড়ে বিকেল ৪.২০ মিনিটে, লাকসাম পৌছায় রাত ৮.৪৭ মিনিটে।
লাকসাম বাসস্ট্যান্ড কিংবা লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুব সহজেই অটো কিংবা রিক্সা করে নওয়াব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়ি পৌছানো যায়।