শিরোনাম:
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বরুড়ায় স্মরণসভা সংগ্রামের মাটিতে বোনা সাফল্যের ফসল নারী উদ্যোক্তা সালমা বেগমের অনুপ্রেরণার গল্প বরুড়ায় বেগম রোকেয়া দিবসে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা পেলেন ৫ জননী বরুড়ায় মানব সেবা সংগঠনের উদ্যোগে নবাগত ইউএনওকে বরণ, বিদায়ী ইউএনওকে সম্মাননা বরুড়ায় আইএসইউ’র আয়োজনে এইচএসসি উত্তীর্ণদের সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন বরুড়ায় জনকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে বৃত্তি পরীক্ষা ও সাংস্কৃতিক উৎসব ৮৯৪ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ, ৩১১ জন পেল বৃত্তি বরুড়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে বিদায়ী সংবর্ধনা বরুড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের আনন্দঘন মিলনমেলা ভালোবাসা ও সম্মানে বিদায়: ইউএনও নু-এমং মারমা মংকে সংবর্ধনা বরুড়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদযাপন প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে খামারিদের সমৃদ্ধির আহ্বান

সংগ্রামের মাটিতে বোনা সাফল্যের ফসল নারী উদ্যোক্তা সালমা বেগমের অনুপ্রেরণার গল্প

Barura Kantha / ৮৭৬৬ Time View
Update : শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

সংগ্রামের মাটিতে বোনা সাফল্যের ফসল

নারী উদ্যোক্তা সালমা বেগমের অনুপ্রেরণার গল্প

আবু ইউছুফ রাবেতঃ

সংসারের টানাপোড়েন, দারিদ্র্যের চাপ আর জীবনের প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলার নামই সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামের বুক চিরে যে সাফল্যের সূর্য ওঠে, তার নাম সালমা বেগম—বরুড়া উপজেলার জীবনপুর গ্রামের এক সাহসী, স্বপ্নবান নারী উদ্যোক্তা।

২০০৬ সাল। বয়স তখন মাত্র ১৭। অল্প বয়সেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় তাঁর। বিবাহের পর থেকেই সংসারে আর্থিক সংকট যেন নিত্যসঙ্গী। এরই মধ্যে প্রথম সন্তানের আগমন—দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। জীবনের হাল ধরতে স্বামীকে পাঠানো হয় প্রবাসে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—প্রবাসেও স্বপ্ন ভাঙে, ফেরে হতাশা। সংসারের আকাশে জমে ওঠে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ।

কিন্তু হাল ছাড়েননি সালমা বেগম। ভেঙে পড়েননি হতাশার কাছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ২০১১ সালে শুরু করেন গরু ও গাভী পালন। মাত্র দুইটি গরু দিয়েই শুরু—আজ যা পরিণত হয়েছে একটি সফল বাণিজ্যিক খামারে। ধীরে ধীরে প্রতিটি বাছুর থেকে ভালো গাভী রেখে বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয় ধৈর্য, আর আল্লাহর রহমতে জীবনে ফিরতে থাকে স্বচ্ছলতা।

২০১৬ সালে পাঁচটি উন্নত জাতের গাভী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে “মেসার্স মা বাবার দোয়া এগ্রো ফার্ম”—যা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে সনদপ্রাপ্ত। এক বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই খামারে বর্তমানে রয়েছে ২৫টি গরু, ৩২টি ছাগল, ৫০টি কবুতর, ২০টি হাঁস, ১৬টি টার্কিশ মুরগি ও ২০টি দেশি মুরগি।

২০১৯ সালে করোনা মহামারিতে আবারও থমকে দাঁড়ায় জীবনের চাকা। কিন্তু দুর্দিনের সঙ্গে লড়াই করাই যেন তাঁর অভ্যাস। মনোবল শক্ত করে ফের ঘুরে দাঁড়ান তিনি। আজ তাঁর খামার থেকে বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার গরু বিক্রি হয় এবং প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকার দুধ বিক্রি করে সংসারে আসে স্বচ্ছলতা।

শুধু নিজের পরিবার নয়—সালমা বেগম গড়ে তুলেছেন মানুষের জীবিকার পথও। তাঁর খামারে বর্তমানে ৬ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁকে দেখে গ্রামের অনেক নারী গাভী পালন শুরু করেছেন, হয়েছেন স্বাবলম্বী। একজন নারীর সাফল্য হয়ে উঠেছে বহু নারীর অনুপ্রেরণা।

আজ স্বামী ও তিন সন্তানকে নিয়ে শান্তিময় জীবন কাটাচ্ছেন সালমা বেগম। তাঁর জীবনের গল্প প্রমাণ করে—ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম আর বিশ্বাস থাকলে দারিদ্র্য কখনো শেষ কথা হতে পারে না।

সালমা বেগম শুধু একজন নারী উদ্যোক্তা নন—তিনি সাহসের নাম, সংগ্রামের প্রতীক, আর স্বপ্নজয়ের এক জীবন্ত উদাহরণ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর